আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী থেকে এখন কালাই জিয়া পরিষদের সভাপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
১৫ আগস্টের তথা জাতীয় শোক দিবসের প্রধান অতিথি এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জয়পুরহাট-২ আসনের এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন-এর একান্ত আস্থাভাজন মো. মোকছেদ হোসেনকে উৎকোচের মাধ্যমে জিয়া পরিষদের কালাই উপজেলা কমিটির সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী এম এ করিম’কে সহ-সভাপতি বানানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মো. আমিনুর রহমান বকুল ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এই কমিটিতে সরকারি চাকুরিজীবীরা আছেন, এ কমিটি বিষয়ে জানেননা ১০ বছর পদে থাকা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও এ কমিটিতে বিতর্কিত লোক ঢোকানোসহ সাংগঠনিক নানা অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি, জিয়া পরিষদ জয়পুরহাট জেলা কমিটির সভাপতি মো. আমিনুর রহমান বকুল ও সাধারণ সম্পাদক মো.শহিদুল ইসলামের যৌথ স্বাক্ষরে জিয়া পরিষদ কালাই উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি এতোদিন গোপন রাখা হয়। দলীয় গোপন সূত্রে বিষয়টি এতোদিন পরে জানাজানি হওয়ায় ওই কমিটিতে থাকা অনেকেই বিড়ম্বনায় পরেছেন। এদিকে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কালাই উপজেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি পদে থাকা মো. আতাউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তালুকদার লায়নর উভয়েই দলের জন্য নিবেদিত ও সক্রিয় ছিলেন বলে জানা যায়। অথচ তারাও ওই কমিটির বিষয়ে কিছু জানেননা। এমনকি আগের কমিটির পুরাতন এবং নতুন কমিটির অনেকেই নতুন কমিটিতে থাকার বিষয়টি জানেন না। এই কমিটি বিষয়ে আরো জানা গেছে, বিতর্কিত ওই কমিটিতে সারকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক, সহকারী শিক্ষক ও দপ্তরীসহ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন পদে কমিটিতে থাকা অনেকেই জানেন না।
কালাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নবগঠিত জিয়া পরিষদ কালাই উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন জানান, নতুন ওই কমিটি গঠন এবং তাতে তাাঁকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাখার বিষয়টি তার অজানা।
কালাই মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং বর্তমান কালাই উপজেলা জিয়া পরিষদ কমিটির প্রচার সম্পাদক সামিয়েলুস সবুর জানান, তার বন্ধুবান্ধব সবাই বিএনপির নেতাকর্মী। তার উঠাবসা তাদেরই সাথে। তাদের মধ্যে কেউ এ কাজ করে থাকতে পারে। তবে ওই কমিটিতে থাকার বিষয়টি তার অজানা।
কালাই পৌরসভার থুপসারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হক জানান, তিনি একজন সরকারি চাকুরিজীবী। তার দ্বারা রাজনীতি করা সম্ভব নয়। ওই কমিটিতে দেওয়ার বিষয়টি তার অজানা। তার নাম যাতে জিয়া পরিষদর কালাই উপজেলা শাখার কমিটিতে থেকে বাদ দেওয়া হয়, সে কথা তিনি জিয়া পরিষদের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামিম রেজাকে বলে দিয়েছেন।
জিয়া পরিষদ কালাই উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তালুকদার লায়নর জানান, নতুন কমিটিতে অনেক যোগ্য ও দলের জন্য নিবেদিত ব্যক্তিকে রাখা হয়নি। ২০১৪ সাল থেকে নতুন পকেটে কমিটি অনুমোদন দেওয়ার আগ পর্যন্ত জিয়া পরিষদ কালাই উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। অথচ নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনিসহ আগের কমিটির সভাপতি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। যাচাই-বাছাই ছাড়া এবং মতামত না নিয়েই নতুন ওই কমিটিতে সদস্য করায় অনেকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন। টাকার বিনিময়ে নতুন পকেট কমিটিতে আওয়ামীলীগের সক্রিয়কর্মীকে সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ধরণের কর্মকাÐে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমবে।
কালাই উপজেলা জিয়া পরিষদের ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সভাপতি থেকে পদে থাকা মো. আতাউর রহমান বলেন, জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আমিনুর রহমান বকুল একজন অর্থলোভী, নীতিহীন ব্যক্তি। টাকার বিনিময়ে আওয়ালীগের সক্রিয় কর্মীকে তিনি জিয়া পরিষদে রাখলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ টাকা হাতানোর স্বভাবটি তাঁর নতুন নয়, আগের। টাকার বিনিময়ে যে, তিনি জিয়া পরিষদ কালাই উপজেলা শাখার নতুন কমিটিতে বিতর্কিত ও ফ্যাসিস্ট ব্যক্তিকে সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন, একথা সহজেই বোধগম্য। তবে বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত, দুঃখজনক এবং বিএনপির জন্য নেতিবাচক।
উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নব নির্বাচিত কালাই উপজেলা জিয়া কমিটির সভাপতি মো. মোকছেদ হোসেন জানান, সে জীবনের প্রথম থেকেই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। চাকুরী বাচাঁনোর তাগিদে তাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থাকতে হয়েছে। ১৫ আগষ্ট অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়েছি, তাতে সাংবাদিকদের সমস্যা কি? সকল সাংবাদিক এমপি স্বপনের চামচামি করেছে। আমি করেছি তাতে কী হয়েছে।
আনীত অভিযোগের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে জিয়া পরিষদ জয়পুরহাট জেলা কমিটির সভাপতি মো. আমিনুর রহমান বকুল জানান, তিনি নবগঠিত কালাই উপজেলা জিয়া পরিষদের কমিটিতে সই দিয়ে অনোমোদন দিয়েছেন জেলা জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো.শহিদুল ইসলামের কথামতো। ওই কমিটির যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে শহিদুল ইসলামই ভালো জানেন।
এ বিষয়ে জেলা জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারি রাজনৈতিক দলের সদস্য থাকতে পারবে কিনা সে বিষয়ে তার সুস্পষ্ট ধারনা নাই। কালাই উপজেলা জিয়া পরিষদের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির র্শীষ স্থানীয় নেতা ও কালাই উপজেলার বিএনপির আহবায়ক ইব্রাহিম হোসেনের পরামর্শে। কে আওয়ামী লীগের কর্মী, কে সরকারি চাকুরিজীবী সেটা তারাই ভালো জানে।
কালাই উপজেলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক বা কর্মচারী কোন রাজনৈতিক দলের কোন সদস্য বা পদে থাকতে পারবেননা। এটা সরকারি চাকুরি বিধির পরিপন্থিী। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক বা কর্মচারি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য বা অন্য কোন পদে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে- সরকারি চাকুরি বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।